বা বন্ধ করে দেওয়া।মহাত্মা গান্ধীব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন বলে জানা যায়।ব্যাকরণের(পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতর সাবজেক্ট) দৃষ্টিকোণ
থেকে দেখতে গেলে হর(প্রত্যেক)+তাল(তালা)=হরতাল বা প্রত্যেক দরজায় তালা! ব্যাকরণ মানেই তিলকে তাল বানানো।তাই ব্যাকরণ নিয়ে বেশী ঘাটাঘাটি না করাই শ্রেয়।হরতালের ইতিহাস কিন্তু বেশ চমৎকার অর্থপূর্ণ।সঠিকভাবে কবে প্রথম,কোথায় হরতাল পালন করা হয় তা জানা যায় নি।তবে ১৮২৭ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া’য় গৃহনির্মাণ শ্রমিকেরা কর্মঘন্টা সর্বাধিক ১০ ঘন্টা করার দাবিতে যে ধর্মঘট পালন করে তাকেই প্রথম হরতাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।প্রথম হরতালটা অর্থপূর্ণ এই কারণে যে,সেটা ছিল শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্যদাবি আদায়ের লক্ষ্যে।বর্তমানে হরতাল অবশ্য ভিন্নরুপ ধারণ করেছে।হরতাল এখন রাজনৈতিক দলের কোনো দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হরতালের অর্থ এটাই।এখন আর কোনো শ্রমজীবী সংগঠন হরতালের মত কর্মসূচি দিতে পারে না কারণ হরতালের পালনের মত পয়সাকড়ি তাদের পকেটে থাকে না।আর যদিও কোনো সংগঠন ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য হরতাল ডাকে সরকার তা সুকৌশলে বানচাল করার ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হরতালের গৌরবময় সময়কাল ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত।ভাষা আন্দোলনের এই সময় ৬ দফা,১১ দফা,শিক্ষা আন্দোলন,৬৯’ এর গণঅভ্যুন্থান ইত্যাদি কর্মকান্ডে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ এক হয়ে হরতাল পালন করেছিল।তারই ফলস্বরুপ আজ আমি বাংলায় লিখছি।এখন বলুন তো,হরতাল ভালো না মন্দ?
মূলত নির্ভর করে উদ্দেশ্যের উপর।
বাহ্যিকভাবে বা সাধারণ দৃষ্টিতে হরতালের ক্ষতির দিক হিসেবে আমরা যা দেখি তা হল,গাড়ি ভাংচুর,দোকান বন্ধ,রাস্তাঘাট ধংসস্তুপে পরিণত করা,অগ্নি-সংযোগ ইত্যাদি।কিন্তু একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে হরতালের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ যা দ্বারায় তা হলঃ
✿কল-কারখানা বন্ধের ফলে দেশের উৎপাদনের গতি ব্যহত হয়।
✿বাণিজ্যিক বন্দরগুলোতে পণ্য আমদানী-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
✿দেশে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম অভাব তৈরী করে ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ✿হরতালে বোমাবাজি হয় বিধায় এসময় প্রচুর অবৈধ অস্ত্রের আমদানী হয়।
✿বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগণ যারা বাংলাদেশে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরীতে ব্যয় করছে তাদের মনে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার মনোভাব তৈরী হয়। ✿আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। ✿হরতাল মোকাবেলা করার জন্য সরকারকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়।রাজস্ব হিসেবে সরকারকে দেশের উন্নয়নের জন্য যে মোটা অংকের অর্থ আমরা দেই তা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে এই হরতাল মোকাবেলা করতেই।
✿হরতালে ব্যাংক ও শেয়ার বাজার স্তব্ধ হয়ে পড়ে ফলে এই খাতের সুষ্ঠ গতিধারা বাঁধার সম্মুখীন হয়। উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রভাব হরতালের দিনই আমাদের তথা জনগণের উপর পড়ে না।নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর এর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়,কিন্তু তখন আর আমাদের কিছুই করার থাকে না......।। :( দেশটা আমাদেরই ,তাই দেশের ভাল-মন্দ আমাদেরই দেখতে হবে।ক্ষমতাসীন সরকারীদল ও বিরোধীদল যেই হোক না কেন তাদের অন্তত এটা বোঝা উচিত যে দেশের উন্নতি মানে তাদের ক্ষমতা বা প্রভাবের উন্নতি।আপনারা যদি এই দেশটাকে উন্নতদেশে পরিণত করতে পারেন তাহলে একসময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।সোজা কথায়,জাতীয় পর্যায়ে(নিজ ঘরে) দুর্নীতি না করে আন্তর্জাতিক মানের দুর্নীতি করে লাভের পরিমাণটাও তিনগুণ বৃদ্ধি করতে পারবেন।পাশাপাশি,আপনাদের ক্ষমতার পরিধি বিস্তৃতি লাভ করল আর মাঝখান দিয়ে আমার দেশেটাও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হল। :P
তবে হরতালরে এত দোষারোপ করা উচিত না।হরতালের সুবিধা সবচেয়ে বেশীভোগ করে আমার মত স্টুডেন্টরা যারা পরীক্ষার আগেরদিন হরতাল পড়বে এই আশায় পড়ালেখা থেকে ১০০ হাত দূরে অবস্থান করে।
0 comments:
Post a Comment