নটর ডেম কলেজে প্রায়ই বুলেটিন বোর্ডে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার নোটিশ দেখি।সাধারণত আমি কোনো প্রতিযোগিতায় বিশেষ কোনো আগ্রহ প্রকাশ করি না।কিন্তু কয়েকদিন আগে বুলেটিন বোর্ডে যেই নোটিশটা দেখি তা হল-
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) প্রতি বছরের মত এবারও "দুর্নীতি দমন সপ্তাহ-২০১৩" উপলক্ষ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।রচনার বিষয়ঃ
"দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়" ইন্টারেস্টিং বিষয়।ভাবলাম পুরস্কার পাই বা না পাই,লিখে ফেলি অনন্ত নিজে তো দেশের দুর্নীতি সম্পর্কে কিছুটা জানব।যেই ভাবা সেই কাজ।পেপার,ইন্টারনেট ও কিছু বইয়ের থেকে উপাত্ত নিয়ে লিখে ফেললাম।লেখার পর যা জানলাম তা জানার চেয়ে না জানাই বোধ হয় ভালো ছিল।স্বভূমি যে দুর্নীতিতে এতটা সফলতা অর্জন করেছে তা দেখে আমি হতাশ হব কি?
বরং আশ্চর্য হই।বাঙালী মাথায় এত দুর্নীতির বুদ্ধি আহে কোনহান থেইক্যা সেইডাই আমি বুঝবার পারি না।রচনাখানা নিম্নরূপ।সাথে পিডিএফ আকারেও দিলাম। পড়ার পর আশা করি প্রত্যেকেই হতাশ না হইয়া গর্বিত হইবেন। :P
''দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়''
দুর্নীতির আওতা ও পরিধি এতটাই ব্যাপক যে, একে কয়েক লাইনের শব্দে আবদ্ধ করা যায় না। তবুও মূলত দুর্নীতি বলতে সাধারণ অর্থে যা বুঝায় তা হল- স্বাভাবিক নীতির গতি ধারাকে ব্যহত ও নিয়ম লঙ্ঘন করে এমন কোন কাজ করা যা কোন ব্যক্তিস্বার্থ বা দলীয়স্বার্থ চরিতার্থ করে তাই দুর্নীতি। অর্থ্যাৎ, দুর্নীতি হল নীতিবিরুদ্ধ কোন কাজ।
দুর্নীতি ও অর্থনীতির সম্পর্কটা প্রায় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আর মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠের মাঝে যে দূরত্ব বা ব্যবধান রয়েছে তা হল দুর্নীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষ।দুর্নীতির কারণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এর পিছনে মূল কলকাঠি নাড়ছে ক্ষমতার লোভ ও বিপুল অর্থ সম্পদের হাতছানি। এই দুই প্রাপ্তির নেশায় মত্ত হয়ে নিজের অবস্থান ভুলে আদর্শ কে বিসর্জন দিতেও অনেকে পিছপা হয় না।
একটি দেশকে বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্যে করে সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারকে নিজের অনুকূলে আনতে হলে প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে নিজ দেশকে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে হবে। তবেই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান কে সুস্পষ্ট করে তোলা সম্ভব।কিন্তু দুর্নীতি নামক বিষ যে দেশে রয়েছে সেই দেশের পক্ষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। কেননা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত দুর্নীতি মুক্ত হওয়া।বর্তমান মানব সভ্যতায় সমাজের শিরায় উপশিরায় বইছে দুর্নীতির কালো রক্তের প্রবাহ। এই সর্বনাশা সামাজিক ব্যাধি বর্তমান বিশ্বকে আজ হুমকির সম্মুখীন করেছে।তৃতীয় বিশ্বের দেশসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও এখন সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কালো থাবার প্রভাব লক্ষণীয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ নীতি, শিল্প বাণিজ্য, ব্যবসাসহ সকল ক্ষেত্রেই চলছে দুর্নীতির তাণ্ডব লীলা।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি এক ভয়াবহ অভিশাপ। বার্লিন ভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ''ট্রান্সপারেনসি ইন্টারন্যাশনাল'' পরিচালিত দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক।২০০১-২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে এ সংস্থাটি চিহ্নিত করে। ২০১২ সালে 'টি আই' রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০০ এর মধ্যে ২৬ স্কোর পেয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩ তম!!!সর্বনিম্নের তালিকায় ১৭৬ টি দেশের মধ্যে ১৪৪ তম। ঠিক এর পূর্বের বছর অর্থ্যাৎ, ২০১১ তে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১২৩ তম হয়েছিল। টি আই এর ২০১২ সালের জরিপে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান। এর পরেই অবস্থান আমাদের বাংলাদেশের!!!
২০০৫ সালের ১৯ জুলাই "দৈনিক ইত্তেফাক" পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কীরূপ প্রভাব ফেলেছে তা তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিষয় সমূহ নিম্নরূপ :-
*** রাষ্ট্রয়াত্ত শিল্পের প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ ৪০০০ কোটি টাকা।
*** বিমান খাতে দুর্নীতির ফলে বিদেশী মুদ্রায় ৫০০০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশী ত্রয়ার লাইন সার্ভিস দাতাদের কাছে।
*** ব্যাংকিং খাতে অদক্ষতার ফলে ৮০০০ কোটি টাকা প্রতি বছর লোকসান হচ্ছে।
*** সরকারী কোন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি লক্ষণীয়।
*** চট্টগ্রাম খাতে শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনার ফলে ৬০০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। যা দেশের গার্মেন্টস খাতে আহরিক নীট আয়ের প্রায় সমান।
*** আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের ও দুর্নীতি থেকে রেহাই নেই। এই খাতেও প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা সিস্টেম লস হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম খাতেও ৪০০ কোটি টাকার মূল্যের পেট্রোলিয়াম পাচার হচ্ছে।
*** আমদানি রপ্তানি খাত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এক অন্যতম প্রধান উৎস। এই খাতে ও দুর্নীতির অনুপ্রবেশ রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক ১৯৯৫ সালে "সাহায্য স্মারক" প্রতিবেদনে বলেছে-"বাংলাদেশে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে মোট লেনদেনের ৭% ঘুষ দিতে হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে চিন্তনীয় বিষয় এই যে, ২০০৫ সালে যদি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতির চিত্র এরূপ থাকে তবে আজ ২০১৩ সালে এসে এই দুর্নীতির খাত সেই হারে বৃদ্ধি পেয়ে সমহারে অর্থের পরিমাণে বেড়েছে, এটা নিশ্চিত রূপেই বলা যায়।এই দুর্নীতি শুধু আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তা নয়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের অর্থনৈতিক ভাবমূর্তিকে ও করছে প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশীয় রপ্তানিকারকদের তাদের পণ্য বাহিরের আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারছে না কারণ আমদানিকারকগণ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে।
কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগকে বন্ধ করে দিচ্ছে। সর্বনাশা এই দুর্নীতি। বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধিসহ দেশীয় মুদ্রার মান হ্রাস পাচ্ছে। সুতরাং, এটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, দুর্নীতিই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধাণ শত্রু বলে মনে করেন।ট্রান্সপারেনসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (T.I.B) বলে- নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, পদ্মা সেতু, রেলসেতু, শেয়ার বাজার, হল মার্ক, ডেসটিনি, ক্ষমতাশালীদের সম্পদের হিসাব না দেয়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব, দুর্নীতিকে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিয়েছে।
১৯৭১ সালের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি তাকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শুধুমাত্র এ সরকার নয়, সরকারসহ সর্ব স্তরের জনসাধারণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আজ যে দুর্নীতি দাপটের সাথে সমাজে বিরাজ করছে তাকে সমূলে উৎখাত করতে হবে আমাদের।একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মত দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, তবেই আমরা দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) প্রতি বছরের মত এবারও "দুর্নীতি দমন সপ্তাহ-২০১৩" উপলক্ষ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।রচনার বিষয়ঃ
"দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়" ইন্টারেস্টিং বিষয়।ভাবলাম পুরস্কার পাই বা না পাই,লিখে ফেলি অনন্ত নিজে তো দেশের দুর্নীতি সম্পর্কে কিছুটা জানব।যেই ভাবা সেই কাজ।পেপার,ইন্টারনেট ও কিছু বইয়ের থেকে উপাত্ত নিয়ে লিখে ফেললাম।লেখার পর যা জানলাম তা জানার চেয়ে না জানাই বোধ হয় ভালো ছিল।স্বভূমি যে দুর্নীতিতে এতটা সফলতা অর্জন করেছে তা দেখে আমি হতাশ হব কি?
বরং আশ্চর্য হই।বাঙালী মাথায় এত দুর্নীতির বুদ্ধি আহে কোনহান থেইক্যা সেইডাই আমি বুঝবার পারি না।রচনাখানা নিম্নরূপ।সাথে পিডিএফ আকারেও দিলাম। পড়ার পর আশা করি প্রত্যেকেই হতাশ না হইয়া গর্বিত হইবেন। :P
''দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়''
দুর্নীতির আওতা ও পরিধি এতটাই ব্যাপক যে, একে কয়েক লাইনের শব্দে আবদ্ধ করা যায় না। তবুও মূলত দুর্নীতি বলতে সাধারণ অর্থে যা বুঝায় তা হল- স্বাভাবিক নীতির গতি ধারাকে ব্যহত ও নিয়ম লঙ্ঘন করে এমন কোন কাজ করা যা কোন ব্যক্তিস্বার্থ বা দলীয়স্বার্থ চরিতার্থ করে তাই দুর্নীতি। অর্থ্যাৎ, দুর্নীতি হল নীতিবিরুদ্ধ কোন কাজ।
দুর্নীতি ও অর্থনীতির সম্পর্কটা প্রায় মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আর মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠের মাঝে যে দূরত্ব বা ব্যবধান রয়েছে তা হল দুর্নীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষ।দুর্নীতির কারণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এর পিছনে মূল কলকাঠি নাড়ছে ক্ষমতার লোভ ও বিপুল অর্থ সম্পদের হাতছানি। এই দুই প্রাপ্তির নেশায় মত্ত হয়ে নিজের অবস্থান ভুলে আদর্শ কে বিসর্জন দিতেও অনেকে পিছপা হয় না।
একটি দেশকে বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্যে করে সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।সমগ্র বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারকে নিজের অনুকূলে আনতে হলে প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে নিজ দেশকে অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে হবে। তবেই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান কে সুস্পষ্ট করে তোলা সম্ভব।কিন্তু দুর্নীতি নামক বিষ যে দেশে রয়েছে সেই দেশের পক্ষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। কেননা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত দুর্নীতি মুক্ত হওয়া।বর্তমান মানব সভ্যতায় সমাজের শিরায় উপশিরায় বইছে দুর্নীতির কালো রক্তের প্রবাহ। এই সর্বনাশা সামাজিক ব্যাধি বর্তমান বিশ্বকে আজ হুমকির সম্মুখীন করেছে।তৃতীয় বিশ্বের দেশসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও এখন সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কালো থাবার প্রভাব লক্ষণীয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ নীতি, শিল্প বাণিজ্য, ব্যবসাসহ সকল ক্ষেত্রেই চলছে দুর্নীতির তাণ্ডব লীলা।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি এক ভয়াবহ অভিশাপ। বার্লিন ভিত্তিক দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ''ট্রান্সপারেনসি ইন্টারন্যাশনাল'' পরিচালিত দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক।২০০১-২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে এ সংস্থাটি চিহ্নিত করে। ২০১২ সালে 'টি আই' রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০০ এর মধ্যে ২৬ স্কোর পেয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩ তম!!!সর্বনিম্নের তালিকায় ১৭৬ টি দেশের মধ্যে ১৪৪ তম। ঠিক এর পূর্বের বছর অর্থ্যাৎ, ২০১১ তে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১২৩ তম হয়েছিল। টি আই এর ২০১২ সালের জরিপে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান। এর পরেই অবস্থান আমাদের বাংলাদেশের!!!
২০০৫ সালের ১৯ জুলাই "দৈনিক ইত্তেফাক" পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কীরূপ প্রভাব ফেলেছে তা তুলে ধরা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিষয় সমূহ নিম্নরূপ :-
*** রাষ্ট্রয়াত্ত শিল্পের প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ ৪০০০ কোটি টাকা।
*** বিমান খাতে দুর্নীতির ফলে বিদেশী মুদ্রায় ৫০০০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশী ত্রয়ার লাইন সার্ভিস দাতাদের কাছে।
*** ব্যাংকিং খাতে অদক্ষতার ফলে ৮০০০ কোটি টাকা প্রতি বছর লোকসান হচ্ছে।
*** সরকারী কোন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি লক্ষণীয়।
*** চট্টগ্রাম খাতে শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনার ফলে ৬০০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। যা দেশের গার্মেন্টস খাতে আহরিক নীট আয়ের প্রায় সমান।
*** আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাসের ও দুর্নীতি থেকে রেহাই নেই। এই খাতেও প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা সিস্টেম লস হয়। এছাড়া পেট্রোলিয়াম খাতেও ৪০০ কোটি টাকার মূল্যের পেট্রোলিয়াম পাচার হচ্ছে।
*** আমদানি রপ্তানি খাত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এক অন্যতম প্রধান উৎস। এই খাতে ও দুর্নীতির অনুপ্রবেশ রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক ১৯৯৫ সালে "সাহায্য স্মারক" প্রতিবেদনে বলেছে-"বাংলাদেশে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে মোট লেনদেনের ৭% ঘুষ দিতে হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে চিন্তনীয় বিষয় এই যে, ২০০৫ সালে যদি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতির চিত্র এরূপ থাকে তবে আজ ২০১৩ সালে এসে এই দুর্নীতির খাত সেই হারে বৃদ্ধি পেয়ে সমহারে অর্থের পরিমাণে বেড়েছে, এটা নিশ্চিত রূপেই বলা যায়।এই দুর্নীতি শুধু আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তা নয়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের অর্থনৈতিক ভাবমূর্তিকে ও করছে প্রশ্নের সম্মুখীন। দেশীয় রপ্তানিকারকদের তাদের পণ্য বাহিরের আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারছে না কারণ আমদানিকারকগণ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে।
কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগকে বন্ধ করে দিচ্ছে। সর্বনাশা এই দুর্নীতি। বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধিসহ দেশীয় মুদ্রার মান হ্রাস পাচ্ছে। সুতরাং, এটি সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, দুর্নীতিই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধাণ শত্রু বলে মনে করেন।ট্রান্সপারেনসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (T.I.B) বলে- নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, পদ্মা সেতু, রেলসেতু, শেয়ার বাজার, হল মার্ক, ডেসটিনি, ক্ষমতাশালীদের সম্পদের হিসাব না দেয়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব, দুর্নীতিকে উদ্বেগজনক অবস্থায় নিয়েছে।
১৯৭১ সালের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি তাকে দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শুধুমাত্র এ সরকার নয়, সরকারসহ সর্ব স্তরের জনসাধারণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আজ যে দুর্নীতি দাপটের সাথে সমাজে বিরাজ করছে তাকে সমূলে উৎখাত করতে হবে আমাদের।একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মত দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, তবেই আমরা দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।
PDF আকারে দিয়েছেন বলছেন যে ওটা কই?
ReplyDelete