যাকে নিয়ে এত কথা বলছি তাকে আপনারা অনেকেই চিনেন হয়ত বা। তার নাম সালমান খান।(কেউ আবার ভুলে ইন্ডিয়ান হিরো সাল্লু মামা থুক্কু সালমান খানকে ভেবে বসবেন না। )
নিচের ছবিটি দেখলেই বুঝবেন আমি কোন সালমান খানের কথা বলছি।
আসুন বাংলাদেশী বংশদ্ভুত , আমাদের গর্ব সালমান খান সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখি।
কে এই সালমান খান?
সালমান খান (জন্ম: ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ) একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী সম্পর্কে একথায় বলা চলে www.Khanacademy.org এর প্রতিষ্ঠাতা।তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রকৌশলী ।তাঁর দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। তাঁর বাবা ডা. ফখরুল আমিন খান চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর দাদা আব্দুল ওয়াহাব খান ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার (১৯৫৫-৫৮)। সালমানের বাবা একসময় পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে(America)। সেখানেই লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরে সালমানের জন্ম (১৯৭৭) এবং বেড়ে ওঠা। ১৯৯১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি তাঁর বাবা কে হারান।
সালমানের পড়ালেখা/শিক্ষাজীবন:
- সালমান ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে গণিত ও তড়িৎ প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান—এ দুই বিষয়ের ওপর স্নাতক করেন।
- একই বিশ্ববিদ্যালয়(এমআইটি) থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এর ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন
- অতঃপর এমবিএ করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে।
কী এই “খান একাডেমী” ?
Khan Academy একটি অনলাইন ভিত্তিক অ-লাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সালমান খান এর প্রতিষ্ঠাতা। “Providing a High Quality Education to Anyone, Anywhere” স্লোগানে এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করে।২০০৬ সালে এই খান একাডেমীর জন্ম। আর ইউটিউবে এর জন্মদিন অর্থ্যাৎ ইউটিউবে একাউন্ট খোলা হয় ২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বর।এখানে Mathematics, History, Healthcare and Medicine, Finance, Physics, Chemistry, Biology, Astronomy, Economics, Cosmology, Organic Chemistry, American Civics, Art history, Microeconomics এবং Computer science. এই সবই আপনি শিখতে পারবেন বিনামূল্যে(ফ্রীতে)খান একাডেমী বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিন হাজারের বেশি ভিডিও লেকচার, টিউটোরিয়াল তৈরি করেছে।
কীভাবে শুরু হল খান একাডেমীর পথচলা ?
ক্ষুদ্র প্রয়াস থেকেই বড় কিছুর সৃষ্টি।সালমান খান সাহেব নিজেও জানতেন না , তাঁর এই ছোট্ট কাজটি তাঁকে এত সম্মান এনে দিবে।আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি , আমাদের বাংলাদেশেও এমন অনেক তরুণ রয়েছে যারা শত বাঁধা পার করে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিত্য নতুন উদ্দ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।এসব তরুণ/তরুণীরাই তারুণ্যের প্রতীক।তাদের নিয়েই আমরা গর্বিত।২০০৪ সালের দিকে বিয়ের পর বোস্টনে স্থায়ী হন সালমান। এসময় পরিবার নিয়ে এ শহরে আসেন সালমানের মামা। তখনই জানা যায়, তাঁর মামাতো বোন নাদিয়া অঙ্কে খুব কাঁচা। অঙ্ক কষে সময় নষ্ট করার চেয়ে অন্য কাজে সময় ব্যয় করতেই ভালো লাগে তার। নাদিয়ার সঙ্গে কথা বলে সালমান বুঝতে পারে, পাঠদানের বিষয়টি আনন্দদায়ক নয় বলেই পড়তে ভালো লাগে না বোনের। তখন বোনকে পড়ানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে অঙ্কের প্রতি আগ্রহী করে তোলে নাদিয়াকে। বোনটিও তাই অবশেষে সবকিছু ভুলে আটঘাট বেঁধে শুরু করে পড়াশোনা। দূরে থাকার কারণে টেলিফোন ও ইয়াহু ডুডল সার্ভিস্টির মাধ্যমে চলে পাঠদান।
সফলতা আসে অল্প সময়েই। বিদ্যালয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো ফলাফল করে নাদিয়া। নাদিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুই ভাই আরমান ও আলীকেও পড়ানো শুরু করে সালমান। পুরো ব্যাপারটা হয়ে যায় নেশার মতো। শিক্ষক হিসেবে এ নতুন কাজটা ভালো লাগে তাঁর। তবে সময় নিয়ে যত সব মুশকিল তিনি। চাকরি শেষে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন আবার নাদিয়া ও তার ভাইয়েরা ব্যস্ত থাকে খেলাধুলা কিংবা পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট অন্য কাজে। তাদের সঙ্গে সময় মেলানোটাই কঠিন। ভেবে ভেবে কিছুদিন পর এর সমাধান বের করে ফেলেন সালমান। গণিতের সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে ভিডিও তৈরি করে তা দিয়ে দেন ইউটিউবে। এর ফলে নাদিয়া ও তার দুই ভাই বাড়িতে বসে সহজেই পেয়ে যায় গণিতের কঠিন সব সমস্যার সমাধান। পাঠদানের এ নতুন পদ্ধতিই ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়।
তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে সালমানের দায়িত্বও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ভিডিওগুলো আরও উন্নত করার জন্য তিনি শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম। গণিতের পাশাপাশি জীববিদ্যা, অর্থনীতি, রসায়ন, ইতিহাস, আরও নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরী করেন।
নিজের তৈরী ভিডিও গুলো সম্পর্কে সালমান খান বলেনঃ-
“আমি নিজেই ছাত্রজীবনে একঘেয়ে পাঠ্যপুস্তকের কারণে হতাশায় ভুগতাম। আনন্দময় হওয়া উচিত পাঠদানের পদ্ধতি। নিজের ভিডিওগুলোতে খুব সহজভাবে প্রতিটি সমস্যার সমাধান দিতে চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে, সেদিকে ছিল আমার সজাগ দৃষ্টি।”অর্থের লোভ নেই সালমানের। তাঁর তৈরী ভিডিও দেখে বিশ্বের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে এটাই সালমানের বড় প্রাপ্তি বলে তিনি মনে করেন।ধীরে ধীরে তাঁর প্রকল্প যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করল অনেক কোম্পানীই চেয়েছিল তাঁর প্রকল্পকে বাণ্যিজিকভাবে ব্যবহার করতে, তাদের সবাইকেই হাসি মুখে “না” বলেছেন তিনি।ইচ্ছা করলেই তিনি অনেক ডলার($) আয় করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, কেননা তাঁর লক্ষ্য শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করে তোলা।পড়ালেখার প্রতি ছাত্র/ছাত্রীদের যে অনাগ্রহ তা দূর করা।দিনের বেশির ভাগ সময় এই শিক্ষকতার কাজে দেয়ার জন্য একসময় চাকরী ছেড়ে দিলেন তিনি।
পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তিঃ
অর্থের লোভই বড় নয়। মানব কল্যাণে কাজ করে যারা অন্য মানুষেরাই তাঁকে সম্মানের রাজসিংহাসনে আধিষ্ঠিত করে। বিশ্ব দরবারে খান একাডেমী এক পরিচিত নাম।সারা বিশ্বজোড়া যার পাঠশালা।খান একাডেমীর তৈরী করা ভিডিওগুলো দেখে সারা বিশ্বের লাখো শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের কঠিন কঠিন বিষয়গুলো অনায়াসে শিখে ফেলছে।
মানব কল্যাণে কাজ করার জন্য খান একাডেমী বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে পুরুস্কার পায়।
- মানুষ বাঁচে তাঁর স্বপ্ন নিয়ে। নিজের ভাবনা-চিন্তাগুলো দিয়ে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করে পুরো পৃথিবীটা। তবে খুব অল্প কিছু মানুষ হয়ে ওঠেন সফল। এই গুটিকতক মানুষ ও তাঁদের চিন্তাভাবনাগুলো খুঁজে বের করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান Google(আমার মামু)। অসাধারণ সব পরিকল্পনা জনসমক্ষে আনার জন্য ঘোষণা করা হয় “Project Ten to the Hundrade” ’ নামে ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার। প্রতিষ্ঠানটির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৮ সালে দেওয়া হয় এ ঘোষণা। এতে ১৭০টির বেশি দেশ থেকে জমা পড়ে এক লাখ চুয়ান্ন হাজার আবেদন। দুই বছরের যাচাই-বাছাই শেষে প্রথমে ১৬টি পরিকল্পনা নির্বাচন ও তার তালিকা তৈরি করে Google। পরে চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া হয় পাঁচটিকে। নির্বাচিত প্রকল্পগুলোকে আরও বিস্তৃত করার জন্য দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থসহায়তা। শিক্ষা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে সালমানের ‘খান একাডেমি’র বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। একাডেমিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০ লাখ ডলার পুরস্কার দেয় গুগল। (২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে)
- সালমানের কাজে মুগ্ধ বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটস। তিনি ও তাঁর এগারো বছর বয়সী সন্তান ররি নিয়ম করে ইউটিউবে বসে গণিত বিষয়ে জানার জন্য। বিল গেটসকে শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়ে দারুণ খুশি সালমান।
- ২০১০ সালে সালমান “Microsoft Tech Award” লাভ করেন।
- Ann ও John Doerr অনুদান দেয় ১০০,০০০ ডলার($)।
- “সুলিভান ফাউন্ডেশন” বিনা মূল্যে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে খান একাডেমীকে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার($) অনুদান হিসেবে প্রদান করে।
- ২০১২ সালের জুনে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ১৪৬ তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে নির্বাচিত হন সালমান। ৩৫ বছর বয়সী সালমান খানই এমআইটির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সমাবর্তন বক্তা।
- ২০১২ সালের মে মাসে রাইস ইউনিভার্সিটিতেও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেয় সালমান খান।
পুরুস্কার পাওয়ার পর সালমান খানের মজা করে বলেনঃ
“দারুণ খুশি আমি। আমার নাতি-নাতনিরাও আমার দেখা ভিডিও দেখে শিখতে পারবে—এটা ভাবতেই ভালো লাগছে।”
ও আরেকটা কথা সালমান খানের ডাক নামঃ স্যাল খান। (Sal Khan)
চলুন আমরা ও শিখব খান একাডেমী থেকেঃ
- খান একাডেমির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ www.KhanAcademy.org
- খান একাডেমির ইউটিউব একাউন্টঃ
- ফেসবুকে খান একাডেমিঃ www.Facebook.com/khanAcademy
- টুইটারে খান একাডেমীঃ https://twitter.com/khanacademy
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসে।স্বল্প এই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে অনেকেই তাদের নাম পৃত্থিবীর বুকে রেখে যেতে পারে।আর যারা অবহেলায় সময়টাকে নষ্ট করে মহাকালের অনন্ত অন্ধকারে তাদের নাম একসময় হারিয়ে যায়। খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান সেই মানব জাতিরই একজন যে এই অল্প সময়টুকু মানব কল্যাণে ব্যয় করে মানব হৃদয়ে নিজের নামকে চিরস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
#Respect! |
0 comments:
Post a Comment