হ্যাকার নাম শুনলেই প্রথমেই যে জিনিসটা আমার চোখের সামনে ভেসে আসে তা হল নিজের সাইটে একটা কালো ডিফেস পেজ।যদিও কেবল ওয়েবসাইট হ্যাক করাই হ্যাকারের কাজ না।আরও অনেক কাজ আছে।এবার মূল কথায় আসা যাক।টাইটেলে আমি ‘ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার’ শব্দটা ব্যবহার করেছি।আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন
কী এই ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার ,যারা জানেন না তাদের জন্য হ্যাকার সম্পর্কে কিছু কথা প্রথমে বলে নিই।
হ্যাকার কে?: সাধারন বক্তব্য যারা হ্যাকিং করে তারাই হ্যাকার।তাহলে হ্যাকিংটা কি?হ্যাকিং একটি প্রক্রিয়া যেখানে কেউ কোন বৈধ অনুমতি ছাড়া কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে। যারা এটা করে তারাই হচ্ছে হ্যাকার।
হ্যাকারের প্রকারভেদঃ হ্যাকারদের চিহ্নিত করা হয় Hat বা টুপি দিয়ে।হ্যাকারদের ৩ ভাগে বিভক্ত করা হয়।
  • White Hat Hacker
  • Black Hat hacker
  • Grey Hat Hacker
White Hat Hacker: সবাই তো মনে করে হ্যাকিং খুবই খারাপ কাজ তাই না।কিন্তু White Hat hacker কিন্তু খারাপ না।একজন white hat hacker একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটিগুলো বের করে এবং ঐ সিকিউরিটি সিস্টেমের মালিকে ত্রুটি দ্রুত জানায়। এবার সিকিউরিটি সিস্টেমটি হতে পারে একটি কম্পিউটারের, একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি ওয়েব সাইটের, একটি সফটওয়্যারের ইত্যাদি।
Black Hat Hacker: সবচেয়ে ভয়ংকর হ্যাকার হচ্ছে এ Black hat hacker । এরা কোন একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটিগুলো বের করলে দ্রুত ঐ ত্রুটি কে নিজের স্বার্থে কাজে লাগায়। ঐ সিস্টেম নষ্ট করে। বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। ভবিষ্যতে নিজে আবার যেন ঢুকতে পারে সে পথ রাখে। সর্বোপরি ঐ সিস্টেমের অধীনে যে সকল সাব-সিস্টেম রয়েছে সে গুলোতেও ঢুকতে চেষ্টা করে।হ্যাকার বলতে মূলত সবাই এদেরকেই বুঝিয়ে থাকে।
Grey Hat Hacker এরা হচ্ছে দুমুখো সাপ।এরা যখন একটি একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটি গুলো বের করে তখন সে তার মন মত কাজ করবে। তার মন ঐ সময় কি চায় সে তাই করবে। সে ইচ্ছে করলে ঐ সিকিউরিটি সিস্টেমের মালিকে ত্রুটি জানাতেও পারে অথবা ইনফরমেশনগুলো নষ্ট ও করতে পারে। আবার তা নিজের স্বার্থের জন্য ও ব্যবহার করতে পারে।

এছাড়াও আরো কয়েক ধরনের হ্যাকার রয়েছে।যেমনঃ Ethical hacker,Script Kiddie,Elite Hacker ইত্যাদি।
হ্যাকারদের সাধারন পরিচিতি তো বললাম,এবার তাহলে আসুন বিশ্বের সেরা ১০ জন ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের সাথে পরিচিত হই।
01.Gary McKinnon: সেরা হ্যাকারদের মধ্যে যার নাম প্রথমেই মনে আসে তিনি  Solo হিসেবে পরিচিত।স্কটিশ কন্সপিরেসির এই থিয়োরিস্ট U.S এর এয়ার ফোর্স, আর্মি, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, নাসা, নেভির মত বড় বড় নেটওয়ার্কে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বিশ্বরেকর্ড করেন। গ্লোবাল এনার্জি ক্রাইসিস সমাধানের নিমিত্তে এগুলো থেকে তিনি এলিয়েন স্পেসক্র্যাফট এর যাবতীয় প্রমাণাদি চুরি ও নষ্ট করেন যা ইউএস আদালতের ভাষ্যমতে প্রায় $৭০০০,০০০ ক্ষতির সমতুল্য। ২০০২ সালে ইউ এস আর্মির সার্ভার স্ক্রিনে “Your security system is crap,” it read. “I am Solo. I will continue to disrupt at the highest levels.” এই ম্যাসেজ দেখা দিয়েছিল যা তিনিই করেছিলেন। Large scale hackings এর সূচনা করার মধ্যে দিয়ে তিনি ইউ এস আর্মির সার্ভার এ হামলা করেন। হামলার কারণ হিসাবে উল্লেখ করতে তিনি বলেন, “ আমার বিশ্বাস ছিল তারা এমন কিছু তথ্য সেখানে লুকিয়ে রেখেছিল যা সকলের জানা দরকার।
 
Gary McKinnon
02.Kevin Mitnick: বিশ্বের সুপরিচিত ও ভয়ংকর হ্যাকারদের মধ্যে মিটনিক একজন যিনি আখ্যায়িত হয়েছেন The most wanted computer criminals in United States এবং The most dangerous hacker in the World হিসেবে। টাচ টোন এবং ভয়েস কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেলফোন ব্যবহার করে মিটনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর আক্সেস নিতেন। মটোরোলার মত বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এই জিনিয়াসের দ্বারা হ্যাকড হয়েছিল যা তাকে সেই দিনগুলিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছিল।
Kevin Mitnick
 03.Jonathan James: এবার যার কথা বলব তার কাহিনী শুনে আপনারও হ্যাকার হতে ইচ্ছে করবে।১৬ বছর বয়সের আমেরিকান এই কিশোর হ্যাকিংকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করেছিলেন যা তাকে ১৬ বারেরও বেশি কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল। ইউএস ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট তার এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল। ইউ এস ডিফেন্স সার্ভার থেকে তিনি প্রায় তিন হাজার অতিগোপন বার্তা ও অনেক ব্যবহারকারীর পার্সওয়ার্ড চুরি করেছিলেন। ১.৭ মিলিয়ন ডলারের নাসা সফটওয়্যার চুরি করে নাসার সার্ভার ও সিস্টেমকে শাটডাউন করতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। চিন্তা করতে পারেন নাসার সিস্টেম শাটডাউ! সাইবারস্পেসে তার এই অস্বাভাবিক ব্যবহার জেমসকে ১০ বছর কম্পিউটার স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করেছিল।
Jonathan James
 04. Adrian Lamo: মাইক্রোসফট, ইয়াহু, সিটিগ্রুপ, ব্যাংক অব আমেরিকা, সিঙ্গুলার এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এর কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্রেকডাউন করে Lamo সর্বপ্রথম বিশ্বরেকর্ড করেন। হোমলেস হ্যাকার নামে পরিচিত বিখ্যাত এই হ্যাকারকে ২০০২ সালে New York আদালতের নির্দেশে এই আচরনের কারনে ৬৫,০০০ ইউএস ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিলেন। ২০১০ সালে Bradley Manning কতৃক বাগদাদে বিমান আক্রমনের ভিডিও উইকিলিকস এর মাধ্যমে তিনিই প্রকাশ করেন। বর্তমানে তিনি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন।
Adrian Lamo
 05.George Hotz: ২০১১ সালে সনি এরিকসন এর প্লেষ্টেশন জেলব্রেক করে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তবে তার বিচার কার্য চলাকালীন সময়ে তার সহযোগীরা তার তৈরি পদ্ধতি জনসমক্ষে প্রকাশ করে যার ফলশ্রুতিতে এনিনমাস হ্যাকারগ্রুপ সনির সার্ভারে হামলা করে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য চুরি করে। তবে তিনি এ বিষয়ে তার সম্পৃক্ততায় অস্বীকৃতি জানায়। তিনি বলেন “ একটি সার্ভার এ আক্রমন করে শুধু ইজজার এর তথ্য চুরি করার মতো কাজ তিনি হলে করতেন না কারণ এটি মোটেও সন্তোষজনক নয় অন্তত তার জন্য।
George Hotz
 06. David Smith: Smith পরিচিতি লাভ করে তার Melissa নামক ই-মেইল ভাইরাস তৈরির মাধ্যমে।তার ভাষ্যমতে এই ভাইরাস ভিকটিম এর কোন ক্ষতি করে না তবে কোন ভিকটিম এর লিস্টে থাকা প্রায় সকল ই-মেইল এ ভাইরাস প্রেরণ করে। এ জন্য তাকে আমেরিকার ফেডারেল প্রিজনে রাখা হয় এবং তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে ইমেইল ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য জেলে পাঠানো হয়।
David Smith
07.Michael Calce: ২০০০ সালে ইয়াহু, আমাজন,ডেল, ইবে,এবং সিএনএন এর নেটওয়ার্কে আক্রমন করে এই হ্যাকার আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন। তৎকালীন সময়ে ইয়াহু ছিল শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু আর আক্রমনের কবলে ইয়াহুর সার্ভার ১ ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য হ্যাকার এর মতো তিনি ও তার হ্যাকার গ্রুপ ইয়াহুর সার্ভার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। ২০০১ সালে Montreal Youth Court এর নির্দেশে তার আট মাসের জেল হয়।
Michael Calce
 08. Robert Tappan Morris: ১৯৮৮ সালে worm তৈরি করে Robert Morris ইন্টারনেটে থাকা এক দশমাংশ কম্পিউটার এ আক্রমন করেন এবং প্রায় ৬০০০ হাজার এরও অধিক কম্পিউটার এ তার নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেন।মাত্র ৯৯ লাইনের কোড লিখে শত শত কম্পিউটার আক্রমণ করেন।পরবর্তিতে এই কোড মরিস ওয়ার্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। ধরা পরার পর মরিস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে, সে কোন খারাপ কাজ করে নি।
কোড ছাড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের সাথে কতগুলো কম্পিউটার সংযুক্ত আছে তা বের করা। তবে তাকে সনাক্ত করতে পুলিশের বেশি সমস্যা হয়নি কারণ এই ভাইরাস ছাড়ার প্রায় একমাস পূর্বে তিনি চ্যাটিং এর সময় এই ভাইরাস এর ব্যাপারে আভাস দিয়েছিলেন এইটি ছিল তার ভুল। তার ভাষ্যমতে , তার ভাইরাস কতৃক আক্রান্ত কম্পিউটার এর কোন ক্ষতি হবে না। মরিস বর্তমানে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইটি) বিভাগে কাজ করছেন।
Robert Tappan Morris
 09.Albert Gonzalez:  প্রথম পরিচিতি লাভ করেন ATM ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির মাধ্যমে। তিনি বর্তমান সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী ক্রেডিট কার্ড এর তথ্য চুরি করে রেকর্ড করেন।২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে এবং তার সহযোগীরা প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করে। . Gonzalez SQL পদ্ধতি ব্যবহার করে malware backdoors তৈরি করে বিভিন্ন কর্পোরেট সার্ভিস এ প্রবেশ করত এবং packet-sniffing (বিশেষত ARP Spoofing) এর মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে তথ্য চুরি করত। গ্রফতার হওয়ার সময় তার কাছ থেকে $১.৬ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়।যার মধ্যে ১.১ মিলিয়ন উদ্ধার করা হয় তার বাড়ির উঠান খুড়ে পলিথিনের ব্যাগ থেকে।২০১০ সালে তার ১০ বছরের জেল হয়।
Albert Gonzalez
 10.Kevin Poulsen: Dark Dante(Code Name) নামে পরিচিত Kevin Poulsen আমেরিকান হ্যাকার FBI ডাটাবেজ ও স্টেশন ফোন লাইন্স হ্যাক করে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন। ভয়ঙ্কর এই হ্যাকার LA রেডিও স্টেশন হ্যাক করে পরিচিতি লাভ করে। পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলে তিনি আত্মগোপন করেন। তবে ১৯৯১ সালের দিকে সে FBI এর হাতে ধরা পড়ে।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে কম্পিউটার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, সহ তথ্য চুরির অভিযোগ সে স্বীকার করেন। যার ফলে তার ৫১ মাসের জেল হয়। এটি পৃথিবীতে তৎকালীন সময় পর্যন্ত হ্যাকিং এর দায়ে সবচেয়ে বড়(দীর্ঘতম) শাস্তি। বর্তমানে তিনি Wired News এর সাংবাদিক ও সিনিয়র ইডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন।
Kevin Poulsen
 সেরা ১০ হ্যাকারের একজন আপনিও হতে পারেন।শুধু প্রয়োজন ইচ্ছা ও অধ্যাবসায়।তবে আপনি Black Hat হবেন, না White hat হবেন সেটা আপনার ব্যাপার।

0 comments:

Post a Comment

 
Top